পৃথিবীর বয়স

পৃথিবীর বয়স প্রায় ৪.৫৪ ± ০.০৫ বিলিয়ন বছর (৪.৫৪ × ১০৯ বছর ± ১%)। এই বয়স উল্কার রেডিওমেট্রিক বয়স নির্ণয় থেকে প্রাপ্ত এবং প্রাপ্ত সবচেয়ে প্রাচীন পার্থিব ও চাঁদের পাথরের রেডিওমেট্রিক বয়সের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ।
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে রেডিওমেট্রিক বয়স নির্ণয় পদ্ধতি আবিষ্কারের পর ইউরেনিয়াম-সীসা বয়স নির্ণয় পদ্ধতিতে দেখা যায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ খনিতে এমন সীসা বিদ্যমান যার বয়স এক বিলিয়ন বছরের বেশি হবে।এই ধরনের খনি থেকে প্রাপ্ত সবচেয়ে পুরনো ছোট ও স্বচ্ছ বস্তু হল গোমেদ-মণি। যা পশ্চিম অস্ট্রেলিয়ার জ্যাক হিলস নামক স্থানে পাওয়া যায়, যার বয়স কমপক্ষে ৪.৪০৪ বিলিয়ন বছর।সৌরজগতে গঠিত উল্কাপিন্ডের মধ্যে ক্যালসিয়াম-অ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ সবচেয়ে প্রাচীন কঠিন বস্তুর বয়স প্রায় ৪.৫৬৭ বিলিয়ন বছর।
এবং এটি গ্রহনযোগ্য বয়স। 


আধুনিক ভূতাত্ত্বিক ধারনার উন্নয়ন




পাললিক শিলার গবেষণা থেকে দেখা যায় পাথর এবং পৃথিবীর স্তরবিন্যাস, প্রকৃতিবিদদের এই ধারণা প্রদান করে যে পৃথিবী তার অস্তিত্বের সময় থেকে অনেক পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে গেছে। এই স্তরগুলিতে অজানা প্রাণীর জীবাশ্ম বিদ্যমান, যা স্তর থেকে স্তর থেকে জীবের অগ্রগতি ব্যাখ্যা করে থাকে।
সপ্তদশ শতকে নিকোলাস স্টেনো প্রথম প্রকৃতিবিদ ছিলেন যিনি জীবাশ্ম অবশিষ্টাংশ এবং পাললিক শিলার মধ্যে সম্পর্কের ধারণা প্রদান করেন। তাঁর পর্যবেক্ষণসমূহ তাঁকে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্তরবিজ্ঞান তত্ত্ব (যেমন, "উপরিপাত নীতি" এবং "মূল আনুভূমিক নীতি") প্রণয়ন করে। ১৭৯০-এর দশকে উইলিয়াম স্মিথ অনুমান করেন যদি বিভিন্ন স্থানে শিলার দুটি স্তরের অনুরূপ জীবাশ্ম পাওয়া যায়, তাহলে সম্ভাবনা রয়েছে যে দুটি স্তরের বয়স একই।উইলিয়াম স্মিথের ভাতিজা এবং ছাত্র, জন ফিলিপস পরে এই ধরনের গড় নিয়ে গণনা করে বলেন পৃথিবীর বয়স প্রায় ৯৬ মিলিয়ন বছর।
অষ্টাদশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে প্রকৃতিবিদ মিখাইল লমনোসভ বলেন যে পৃথিবী মহাবিশ্বে অন্য কিছুর থেকে আলাদা ভাবে এবং কয়েক'শ হাজার বছর পূর্বে গঠিত হয়েছে। লমনোসভের ধারণা ছিল মূলত কাল্পনাপ্রসূ। ১৭৭৯ সালে কমতে দ্যু বুফন একটি পরীক্ষামূলক পদ্ধতি গ্রহণ করে পৃথিবীর বয়স একটি মান অর্জন করার চেষ্টা করেন: তিনি একটি ছোট গ্লোব তৈরি করেন যা পৃথিবীর গঠনতন্ত্রের অনুরূপ এবং তারপর তার শীতলীকরণের হার পরিমাপ করেন। এই পরীক্ষার দ্বারা তিনি একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে পৃথিবীর বয়স প্রায় ৭৫,০০০ বছর!!!!






পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত যত অদ্ভুত গল্প



যুগ যুগ ধরে মানুষ বিভিন্নভাবে পৃথিবীর সৃষ্টি রহস্য ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করছে। একেক ধর্ম বা জাতির মানুষেরা একেকভাবে পৃথিবী ও এই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড সৃষ্টির কাহিনী বর্ণনা করেছে। তার কোনো কোনোটি হয়তো অনেক জনপ্রিয়। যেমন গ্রীক পুরাণ অনুসারে কেয়াস এবং অন্যান্য টাইটানদের মাধ্যমে পৃথিবী সৃষ্টির গল্প আমরা অনেকেই জানি। তবে বিশ্বের বহু দেশ ও জাতির মধ্যে পৃথিবী সৃষ্টির এমন কিছু চমকপ্রদ গল্প প্রচলিত রয়েছে যা হয়তো আমরা অনেকেই জানি না। এসব গল্প যেমন অদ্ভুত, তেমনি মজার। চলুন আজকে বিশ্বজুড়ে প্রচলিত পৃথিবীর সৃষ্টি নিয়ে এমনই কয়েকটি গল্প জেনে নেওয়া যাক।
১. চীন- পূর্ব এশিয়া


২. কুবা সম্প্রদায়- মধ্য আফ্রিকা

৩. চিরোকী- উত্তর আমেরিকা

৪. আদিবাসী সম্প্রদায়- অস্ট্রেলিয়া

৫. জাপান- পূর্ব এশিয়া
বহু বছর ধরে বিজ্ঞানীরা গবেষণা করে এসেছেন, ডিম আগে নাকি মুরগী আগে? চীনের পৃথিবী সৃষ্টির গল্প বা উপকথাগুলোতে এই প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায়। চীনা এই উপকথা অনুসারে, বহু বহু বছর আগে যখন স্বর্গ ও নরক একসাথে যুক্ত ছিল তখন সমস্ত বিশ্বব্রহ্মাণ্ড একটি ডিমের মধ্যে আবদ্ধ ছিল।
চীনের উপকথা অনুসারে ডিমের মধ্যে আবদ্ধ ছিল বিশ্বব্রহ্মাণ্ড; 
মহাবিশ্বের সবকিছু এই ডিমের ভিতরে এলোমেলোভাবে ঘুরে বেড়াতো। ঘুরতে থাকা এসব বস্তুর মধ্যে জন্ম হয় ‘পানগু’ নামের এক অতিকায় ব্যক্তির। দীর্ঘ ১৮,০০০ বছর ধরে সে এই ডিমের মধ্যে ধীরে ধীরে বড় হয়। এ সময় সে ঘুমিয়ে ছিল। এরপর কোনো এক দিন ঘুম ভাঙ্গে পানগুর। ঘুম থেকে উঠে হাই তুলে আড়মোড়া ভাঙ্গে সে। সেই সাথে ভেঙ্গে ফেলে ডিমের খোলস। ফলে ডিমের ভিতর আবদ্ধ থাকা মহাবিশ্ব চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় হালকা বস্তুগুলো উপরে উঠে গিয়ে আকাশ ও স্বর্গ তৈরি করে। আর ভারি বস্তুগুলো নিচে নেমে এসে পৃথিবীর সৃষ্টি হয়।
পানগু, চীনাদের মতে যার থেকে সৃষ্টি সবকিছুর; Source: twitter.com
এ সময় পানগু তার মাথায় স্বর্গ ও পায়ের নিচে পৃথিবীকে রাখে যাতে পৃথিবী ও স্বর্গ আবার এক না হয়ে যায়। এ অবস্থায় প্রতিদিন আকাশ ৩ মিটার করে উপরে উঠে যায়, পৃথিবী ৩ মিটার করে পুরু হয় এবং পানগু ৩ মিটার করে লম্বা হয়। এভাবে আরো ১৮,০০০ বছর ধরে এমনটি চলতে থাকে এবং শেষে পানগু মারা যায়। এরপর পানগুর দেহ থেকে পৃথিবীর সবকিছুর সৃষ্টি হয়। তার হাত-পা থেকে চারদিক ও পাহাড়-পর্বত, রক্ত থেকে নদী, ঘাম থেকে বৃষ্টি, তার গলার স্বর থেকে বজ্র, নিঃশ্বাস থেকে বাতাস, তার দেহের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে নানা প্রাকৃতিক উপাদানের সৃষ্টি হয়। এভাবে পৃথিবী তার সবুজ সুন্দর রূপ পায়। সমস্ত কিছুই শুরু হয় একটি ডিম থেকে। তাই চীনাদের মতে ডিমের অবস্থান শুধু মুরগী না, বরং সবার আগে!
মধ্য আফ্রিকার কুবা সম্প্রদায়ের মধ্যে পৃথিবী সৃষ্টি নিয়ে মজার একটি উপকথা প্রচলিত রয়েছে। তাদের মতে, পৃথিবীর সৃষ্টি হয়েছিল বমন প্রক্রিয়ায়। তাদের সৃষ্টির দেবতার নাম হলো ‘এমবম্বো’। সবকিছুর শুরুতে গোটা পৃথিবী ডুবে ছিল অন্ধকার আদিম জলে। এই অন্ধকার জলে পা ডুবিয়ে বসে ছিলেন এমবম্বো। হঠাৎ তার গা গুলিয়ে উঠলো এবং তিনি বমি করলেন। বমির ফলে তার পেট থেকে বের হয়ে এলো চন্দ্র, সূর্য ও সব তারা। বের হয়ে আসা সূর্যের তাপে ধীরে ধীরে বাষ্প হয়ে যেতে লাগলো সব জল। দেখতে দেখতে শুকনো ডাঙ্গা ভেসে উঠলো এবং ঘন বাষ্পে সৃষ্টি হলো মেঘ।
এমবম্বো; 
এরপর এমবম্বোর শরীরটা আবার কেমন যেন গুলিয়ে উঠলো। আবার বমি করলেন তিনি। এবার তার পেট থেকে বের হলো ৯টি প্রাণী ও মানুষ। এই ৯টি প্রাণী অন্যান্য নানা প্রাণীর সৃষ্টি করলো। এবার এমবম্বোর ৩ ছেলে ঠিক করলো তারাও সৃষ্টির এই কাজে হাত লাগাবে। তারা সৃষ্টি করলো পিঁপড়া, গাছপালা এবং পাখি। সবশেষে এমবম্বো কীভাবে আলো ও আগুন জ্বালাতে হয় তা মানুষকে শিখিয়ে দিলো। এরপর সবকিছু দেখে খুশি হয়ে সব কাজ থেকে অবসর নিয়ে স্বর্গে চলে গেলো এমবম্বো!
সাধারণত পৃথিবী সৃষ্টির বেশিরভাগ গল্পেরই শুরু হয় কোনো দেবতা কিংবা শক্তিশালী কারো দ্বারা। কিন্তু উত্তর আমেরিকার ‘চিরোকী ইন্ডিয়ানরা’ বিশ্বাস করে সবকিছুর শুরু হয়েছিল একটি পোকা থেকে! তাদের উপকথা অনুসারে প্রাণীরা বাস করতো আকাশের এক স্বর্গীয় রাজ্যে। নিচ দিয়ে তার বয়ে চলতো এক বিশাল সমুদ্র। একবার ডায়ুনিসি (Dâyuni’sï) নামের এক পানির পোকা ঠিক করলো ডুব দিয়ে পানির নিচে কী আছে তা দেখে আসবে। যেই ভাবা সেই কাজ! পানির তলদেশে গিয়ে সে দেখলো সেখানে রয়েছে শুধু নরম কাদা। সে এই নরম কাদা নিয়ে উপরে উঠে এলো। পানির উপরে এসে সেই কাদা সবদিক দিয়ে বেড়ে পৃথিবীর রূপ নিলো।
চিরোকীদের মতে পানির এই পোকার মাধ্যমেই পৃথিবীর সৃষ্টি; 
নতুন সৃষ্টি হওয়া এই পৃথিবী দেখে আকাশ থেকে সব পশুপাখি পৃথিবীতে বাস করতে এলো। কিন্তু তার আগে বসবাসযোগ্য করার জন্য তারা পৃথিবীতে এক বিশাল বাজপাখি পাঠালো। এই বাজপাখির পায়ের নখের আঘাতে নরম মাটির কিছু কিছু জায়গা আচড়িয়ে গেলো। ফলে তৈরি হলো পাহাড়-পর্বত। এই কাদা শুকালে সবাই আসলো পৃথিবীতে বসবাস করতে। তবে তখনো সবকিছু ছিল অন্ধকার। তাই তারা উপর থেকে সূর্যকে পৃথিবীর কাছে নিয়ে আসলো। ফলে বসবাসযোগ্য হলো পৃথিবী!
আমাদের মধ্যে প্রায় সকলেই সাপকে ভয় পায়। তবে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের কাছে এই সাপই হলো সৃষ্টির দেবতা। তাদের উপকথা অনুসারে সবকিছুর শুরুতে পৃথিবী ঘুমিয়ে ছিল। ঘুমের মধ্যে এক স্বপ্নরাজ্যে আটকিয়ে ছিল পৃথিবী। এ সময় সবকিছু ছিল শূন্য ও ঠান্ডা। ঠিক এই সময় মাটির নিচে শুধু একটি প্রাণী জেগে ছিল। আর তা হলো রংধনু সাপ। এই সাপের পেটের মধ্যে ছিল সব প্রাণী ও বিভিন্ন গোত্র। উপযুক্ত সময়ে এই সাপ উপরে উঠে আসে ও অনুর্বর পৃথিবী সৃষ্টি করে।
অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের রঙধনু সাপ; 
এরপর পৃথিবীর বিভিন্ন উপাদান তৈরি করে সে। একসময় পেট থেকে সব প্রাণীদেরকে পৃথিবীতে বের করে দেয় সাপটি এবং নজর রাখতে থাকে তাদের উপর। যারা সাপটির কথা মেনে চলে তাদেরকে সে মানুষের রূপ দেয়। আর যারা তার কথা অমান্য করে তাদেরকে সে পরিণত করে পাথরে। তবে এত মানুষের খাবারের ব্যবস্থা হবে কিভাবে? তার এক উপায় বের করে সাপটি। সে প্রতিটি গোত্রের মানুষকে একেকটি নির্দিষ্ট প্রাণীর পূজা করার নির্দেশ দেয়। একেক গোত্রের পূজনীয় প্রাণীটি ওই গোত্রের মানুষেরা শিকার করতে পারবে না, কিন্তু অন্য গোত্রের মানুষেরা শিকার করতে পারবে। ফলে সবার জন্যই পরিমিত খাবারের ব্যবস্থা হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের মতে এভাবেই গড়ে উঠেছিল পৃথিবী।
জাপানে প্রচলিত সৃষ্টির উপকথাগুলোর প্রধান বিষয়বস্তু হলো মিলন ও জন্ম। তাদের উপকথা অনুসারে মহাবিশ্বের শুরুতে সবকিছু আকারহীন বস্তুতে নিমজ্জিত ছিল। চারিদিকে ছিল নিস্তব্ধতা। এই অবস্থা থেকে জন্ম নেয় পদার্থ ও সময়। আর তা থেকে সৃষ্টি হয় স্বর্গ ও বিভিন্ন দেবতার।
ইজানামি ও ইজানাগী; 
এ সময় ৫ জোড়া দেব-দেবীর জন্ম হয়। এদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ জোড় ‘ইজানামি’  ‘ইজানাগী’-কে সৃষ্টির কাজ সম্পন্ন করার জন্য নির্বাচিত করা হয়। তারা একটি বর্শার সাহায্যে মহাজাগতিক বস্তু থেকে কয়েকটি দ্বীপ তৈরি করেন এবং এমনই একটি দ্বীপে মিলিত হন। এরপর ইজানামি সকল জাপানী দ্বীপ ও বিভিন্ন ক্ষুদ্র দেব-দেবীর জন্ম দেন। এভাবে গড়ে ওঠে পৃথিবী!




পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্ব অনুযায়ী তৃতীয়, সর্বাপেক্ষা অধিক ঘনত্বযুক্ত এবং সৌরজগতের আটটি গ্রহের মধ্যে পঞ্চম বৃহত্তম গ্রহ। এটি সৌরজগতের চারটি কঠিন গ্রহের অন্যতম। পৃথিবীর অপর নাম "বিশ্ব" বা "নীলগ্রহ"। ইংরেজি ভাষায় পরিচিত আর্থ (Earth) নামে, গ্রিক ভাষায় পরিচিত গাইয়া (Γαῖα)[n ৫] নামে, লাতিন ভাষায় এই গ্রহের নাম "টেরা (Terra)। 
পৃথিবী হল মানুষ সহ কোটি কোটি প্রজাতির আবাসস্থল। পৃথিবীই একমাত্র মহাজাগতিক স্থান যেখানে প্রাণের অস্তিত্বের কথা বিদিত।৪৫৪ কোটি বছর আগে পৃথিবী গঠিত হয়েছিল। এক বিলিয়ন বছরের মধ্যেই পৃথিবীর বুকে প্রাণের আবির্ভাব ঘটে।

পৃথিবীর জৈবমণ্ডল এই গ্রহের বায়ুমণ্ডল ও অন্যান্য অজৈবিক অবস্থাগুলিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এর ফলে একদিকে যেমন বায়ুজীবী জীবজগতের বংশবৃদ্ধি ঘটেছে, অন্যদিকে তেমনি ওজন স্তর গঠিত হয়েছে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের সঙ্গে একযোগে এই ওজন স্তরই ক্ষতিকর সৌর বিকিরণের গতিরোধ করে গ্রহের বুকে প্রাণের বিকাশ ঘটার পথ প্রশস্ত করে দিয়েছে। পৃথিবীর প্রাকৃতিক সম্পদ ও এর ভূতাত্ত্বিক ইতিহাস ও কক্ষপথ এই যুগে প্রাণের অস্তিত্ব রক্ষায় সহায়ক হয়েছে। মনে করা হচ্ছে, আরও ৫০ কোটি বছর পৃথিবী প্রাণধারণের সহায়ক অবস্থায় থাকবে।
পৃথিবীর উপরিতল একাধিক শক্ত স্তরে বিভক্ত। এগুলিকে ভূত্বকীয় পাত বলা হয়। কোটি কোটি বছর ধরে এগুলি পৃথিবীর উপরিতলে এসে জমা হয়েছে। পৃথিবীতলের প্রায় ৭১% লবণাক্ত জলের মহাসাগর দ্বারা আবৃত। অবশিষ্টাংশ গঠিত হয়েছে মহাদেশ ও অসংখ্য দ্বীপ নিয়ে। স্থলভাগেও রয়েছে অজস্র হ্রদ ও জলের অন্যান্য উৎস। এগুলি নিয়েই গঠিত হয়েছে বিশ্বের জলভাগ। জীবনধারণের জন্য অত্যাবশ্যকীয় তরল জল এই গ্রহের ভূত্বকের কোথাও সমভার অবস্থায় পাওয়া যায় না। পৃথিবীর মেরুদ্বয় সর্বদা কঠিন বরফ (আন্টর্কটিক বরফের চাদর) বা সামুদ্রিক বরফে (আর্কটিক বরফের টুপি) আবৃত থাকে। পৃথিবীর অভ্যন্তরভাগ সর্বদা ক্রিয়াশীল। এই অংশ গঠিত হয়েছে একটি আপেক্ষিকভাবে শক্ত ম্যান্টেলের মোটা স্তর, একটি তরল বহিঃকেন্দ্র (যা একটি চৌম্বকক্ষেত্র গঠন করে) এবং একটি শক্ত লৌহ অন্তঃকেন্দ্র নিয়ে গঠিত।
মহাবিশ্বের অন্যান্য বস্তুর সঙ্গে পৃথিবীর সম্পর্ক বিদ্যমান। বিশেষ করে সূর্য ও চাঁদের সঙ্গে এই গ্রহের বিশেষ সম্পর্ক রয়েছে। বর্তমানে পৃথিবী নিজ কক্ষপথে মোটামুটি ৩৬৫.২৬ সৌরদিনে[n ৬] বা এক নক্ষত্র বর্ষে সূর্যকে প্রদক্ষিণ করে। পৃথিবী নিজ অক্ষের 66.1/2 ডিগ্রি কোণে হেলে রয়েছে। এর ফলে এক বিষুবীয় বছর (৩৬৫.২৪ সৌরদিন) সময়কালের মধ্যে এই বিশ্বের বুকে ঋতুপরিবর্তন ঘটে থাকে।

পৃথিবীর একমাত্র বিদিত প্রাকৃতিক উপগ্রহ হল চাঁদ। ৪.৩৫ বিলিয়ন বছর আগে চাঁদ পৃথিবী প্রদক্ষিণ শুরু করেছিল। চাঁদের গতির ফলেই পৃথিবীতে সামুদ্রিক জোয়ারভাঁটা হয় এবং পৃথিবীর কক্ষের ঢাল সুস্থিত থাকে। চাঁদের গতিই ধীরে ধীরে পৃথিবীর গতিকে কমিয়ে আনছে। ৩.৮ বিলিয়ন থেকে ৪.১ বিলিয়ন বছরের মধ্যবর্তী সময়ে পরবর্তী মহাসংঘর্ষের সময় একাধিক গ্রহাণুর সঙ্গে পৃথিবীর সংঘর্ষে গ্রহের উপরিতলের পরিবেশে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন সাধিত হয়েছিল।
গ্রহের খনিজ সম্পদ ও জৈব সম্পদ উভয়ই মানবজাতির জীবনধারণের জন্য অপরিহার্য। এই গ্রহের অধিবাসীরা প্রায় ২০০টি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রে সমগ্র গ্রহটিকে বিভক্ত করে বসবাস করছে। এই সকল রাষ্ট্রের মধ্যে পারস্পরিক কূটনৈতিক, পর্যটন, বাণিজ্যিক ও সামরিক সম্পর্ক বিদ্যমান। মানব সংস্কৃতি গ্রহ সম্পর্কে বিভিন্ন ধারণার জন্মদাতা। এই সব ধারণার মধ্যে রয়েছে পৃথিবীকে দেবতা রূপে কল্পনা, সমতল বিশ্ব কল্পনা এবং পৃথিবীকে মহাবিশ্বের কেন্দ্ররূপে কল্পনা। এছাড়া একটি সুসংহত পরিবেশ রূপে বিশ্বকে কল্পনা করার আধুনিক প্রবণতাও লক্ষিত হয়। এই ধারণাটি বর্তমানে প্রাধান্য অর্জন করেছে।

Comments

  1. ফালতু ব্লগার আপনি অন্যের লেখা নিজের নামে চালান কোন লজ্জায় ?

    ReplyDelete

Post a Comment

Popular posts from this blog

Privacy Policy & App Related Query